বড়া পিঠার রেসিপি
পেট খারাপ হলে আরাম মিলবে যেসব খাবারে

শিং মাছের ঝোল আর কাঁচকলার তরকারি- প্রাচীন টোটকা হলেও পেট খারাপের সময় এসব খাবার উপকারী।
পেটখারাপ হলে বহু আগে থেকেই কাঁচকলার তরকারি বা শিং মাছের ঝোল খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হত। কলাতে থাকা উপাদান আর প্রোটিনের উৎস হিসেবে মাছ- দুটোই শরীরের দুর্বলতা কাটাতে সাহায্য করে।
কারণ ডায়রিয়া বা পেট খারাপ একটি অস্বস্তিকর ও দুর্বল করে দেওয়া শারীরিক সমস্যা। এটি যতটা অস্বস্তিকর, ততটাই সাধারণ।
বিশ্বজুড়ে এটি দ্বিতীয় সর্বাধিক সাধারণ স্বাস্থ্য সমস্যা বলে উল্লেখ করা হয়েছে। যদিও অধিকাংশ সময় কয়েকদিনের মধ্যে এই সমস্যা আপনাতেই সেরে যায়। তবুও দ্রুত আরাম পেতে কিছু নির্দিষ্ট খাবার খাওয়া দারুণ কার্যকর হতে পারে।
ডায়রিয়ার সময় কী খাবেন আর কী খাবেন না
অনেকেই ভয় পান কোন খাবার পেটে গিয়ে অবস্থা আরও খারাপ করবে কি-না!
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক পুষ্টিবিদ মিশেল রুথেনস্টাইন ওয়েলঅ্যান্ডগুড ডটকম-এ প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলেছেন, “এই সময় এমন কিছু খেতে হবে যা সহজে হজম হয়, শরীরে পানিশূন্যতা পূরণ করে এবং অন্ত্রে পুষ্টি দিয়ে পুনরুদ্ধারে সাহায্য করে।”
টক দই ধর্মী পানীয়
এতে থাকে প্রচুর পরিমাণ ‘প্রোবায়োটিক’।
মিশেল রুথেনস্টাইন বলেন, “এক কাপ কেফির অন্ত্রের ভালো ব্যাক্টেরিয়া পুনরুদ্ধারে সাহায্য করে। হজমে সহায়ক হয় এবং ডায়রিয়ার সময় অন্ত্রের ভারসাম্য ফিরিয়ে আনে।”
তবে যারা কেফির খেতে পারেন না, তারা টক দই বেছে নিতে পারেন। বিশেষ করে চিনি কম এমন প্রাকৃতিক দই খাওয়া ভালো।
তবে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজিস্ট ডেভিড ডি ক্লার্ক একই প্রতিবেদনে বলেন, “ডায়রিয়ার তীব্রতা কমার পরেই কেফির বা দই খাওয়া ভালো, কারণ অন্ত্রের ল্যাক্টেজ (দুধ হজমের রস) উৎপাদনের জন্য কিছুটা সময় দরকার।”
আর যারা দুগ্ধজাত খাবার সহ্য করতে পারেন না (ল্যাক্টোজ অসহিষ্ণুতা রয়েছে), তাদের কেফির বা দই সম্পূর্ণ এড়িয়ে যাওয়া উচিত।
সিদ্ধ গাজর
সবজির আঁশ হজম করতে অনেক শক্তি লাগে। তাই পুষ্টিবিদ সামান্থা পিটারসন পরামর্শ দেন গাজরের মতো সবজি সেদ্ধ করে খাওয়ার।
তিনি বলেন, “সিদ্ধ গাজর অন্ত্রের জন্য কোমল। এতে থাকে দ্রবণীয় আঁশ, যা পাতলা মলকে ঘন করতে সাহায্য করে। এতে থাকা বিটা-ক্যারোটিন রূপান্তরিত হয় ভিটামিন ‘এ’-তে, যা অন্ত্রের আবরণ ও রোগ প্রতিরোধে ভূমিকা রাখে।”
যদি গাজর ভালো না লাগে, তাহলে বিকল্প হিসেবে ডা. ক্লার্ক সিদ্ধ ঝিঙে বা বরবটি খাওয়ার পরামর্শ দেন।
আলু
ডা. ক্লার্ক বলেন, “আলু শক্তি জোগায় এবং সহজপাচ্য। এতে রয়েছে পটাসিয়াম, যা ডায়রিয়ার সময় ঘাম ও পানির সঙ্গে শরীর থেকে বেরিয়ে যায়।”
মিশেল রুথেনস্টাইন বলেন, “পটাসিয়াম রক্তে তরল ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে।”
তবে খেয়াল রাখতে হবে, যেন ভাজা বা ঝাল না হয়। সিদ্ধ, ভাপানো বা মেখে, লবণ দিয়ে খেলে উপকার হবে।
ওটস
অতিরিক্ত আঁশযুক্ত খাবার ডায়রিয়ার সময় ক্ষতিকর হতে পারে। তবে সব আঁশ এক নয়।
যুক্তরাষ্ট্রচিত্তিক গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজিস্ট ডা. সন্ধ্যা শুক্লা বলেন, “অদ্রবণীয় আঁশ যেমন- মটরশুঁটিতে পাওয়া যায়, তা অন্ত্রের গতি বাড়িয়ে দেয় এবং সমস্যা বাড়াতে পারে। অন্যদিকে দ্রবণীয় আঁশ যেমন ওটসে থাকে, তা মলকে ঘন করে এবং অন্ত্রের গতি ধীর করে।”
২০১৭ সালের একটি পর্যালোচনা গবেষণাতেও দেখা যায়, দ্রবণীয় আঁশ সমৃদ্ধ খাবার ডায়রিয়া নিয়ন্ত্রণে কার্যকর।
চাল
চাল, কলা ধরনের খাবার ডায়রিয়া ও বমির সময় উপকারী।
ডা. শুক্লা বলেন, “এই খাবারগুলো সহজে হজম হয়, দ্রুত শক্তি দেয় এবং অন্ত্রের ওপর চাপ কমায়।”
তিনি বলেন, “সাদা চাল ডায়রিয়ার সময় বেশি উপকারী, কারণ এতে দ্রবণীয় আঁশ কম। বাদামি চালে আঁশ বেশি থাকায় তা এড়িয়ে চলাই ভালো।”
কলা
ডায়রিয়ার সময় সহজপাচ্য খাবার সবচেয়ে ভালো, আর কলা তার মধ্যে অন্যতম।
সামান্থা পিটারসন বলেন, “কলা পটাসিয়াম সমৃদ্ধ। আর এর দ্রবণীয় আঁশ ‘পেকটিন’ অন্ত্রের অতিরিক্ত পানি শুষে নেয়, ফলে মল ঘন হয়।”
অ্যাপলসস
ডা. শুক্লা জানান, “আপেলে থাকা পেকটিন মল ঘন করতে সহায়তা করে।”
এটি আসলে আপেলের মিষ্টি পাতলা মিশ্রণ, যা সিদ্ধ করা আপেল চটকে তৈরি করা হয়।
এটি ঘন, ঝোলজাতীয়, অনেকটা জ্যামের মতো দেখতে হলেও এতে সাধারণত কোনো কৃত্রিম উপাদান বা অতিরিক্ত চিনি না থাকলেও চলে।
ডা. ক্লার্ক বলেন, “এটি প্রিবায়োটিক হিসেবে কাজ করে, অন্ত্রের ভালো ব্যাক্টেরিয়া বাড়ায় এবং গ্যাস বা অস্বস্তি কমায়।”
মুরগির ঝোল বা হাড়ের ঝোল
যাদের খেতে অসুবিধা হচ্ছে বা বমি বমি ভাব রয়েছে, তাদের জন্য ঝোল একটি আদর্শ খাবার।
মিশেল রুথেনস্টাইন বলেন, “মুরগির ঝোল বা হাড়ের ঝোলে থাকে সোডিয়াম, পটাসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম, যা ডায়রিয়ার সময় শরীর থেকে বেরিয়ে যায়। ঝোল পান করলে শরীর আবার আর্দ্র হয়।”
চর্বিহীন প্রোটিন
প্রোটিন শরীরের জন্য জরুরি অ্যামিনো অ্যাসিড সরবরাহ করে। যা হজম, কোষ মেরামত, রোগ প্রতিরোধ ও শক্তি উৎপাদনে সহায়ক।
ডা. ক্লার্ক বলেন, “মুরগি বা টার্কির মতো চর্বিহীন মাংস অথবা সেদ্ধ ডিম ডায়রিয়ার সময় ভালো প্রোটিনের উৎস।”
চর্বিযুক্ত বা ঝাল মাংস ডায়রিয়ার সময় অন্ত্রে চাপ সৃষ্টি করতে পারে, তাই তা এড়িয়ে চলা উচিত।
কখন চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে?
ডায়রিয়া সাধারণত নিজে নিজেই সেরে যায়। তবে নিচের যে কোনো লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন—
- ডায়রিয়া ৩ দিনের বেশি স্থায়ী হলে
- পায়খানায় রক্ত দেখা গেলে
- মাথা ঘোরা বা গা শুকিয়ে যাওয়া মতো পানিশূন্যতার লক্ষণ দেখা দিলে
- তীব্র পেটব্যথা, বুকব্যথা, জ্বর বা ওজন কমে গেলে
- সম্প্রতি কোনো ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় ভ্রমণ করে থাকলে বা কোনো নতুন ওষুধ খাওয়ার পর উপসর্গ শুরু হলে ডায়রিয়া অবহেলার রোগ নয়।
সঠিক সময়ে সঠিক খাবার ও পানীয় গ্রহণ করলে দ্রুত আরাম পাওয়া সম্ভব। তবে দীর্ঘস্থায়ী হলে অবশ্যই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
আপনার মতামত লিখুন