আগে যারা স্থানীয় নির্বাচন চায়, তারা সর্বনাশ চায়: মির্জা আব্বাস

“পিআর সিস্টেমে নির্বাচন করতে হবে! কীসের পিআর সিস্টেম। কোনখানে শুনেছেন এগুলো? কে দেয় এই বুদ্ধি আপনাদের?”
জাতীয় নির্বাচনের আগে যারা স্থানীয় সরকার নির্বাচন দাবি করছেন এবং আনুপাতিক হারে ভোটের দাবি তুলছেন, তারা দেশ ও জাতির ‘সর্বনাশ করতে চাচ্ছে’ বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস।
রোববার দলীয় এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, “পিআর সিস্টেমে নির্বাচন করতে হবে! কীসের পিআর সিস্টেম। কোনখানে শুনেছেন এগুলো? কে দেয় এই বুদ্ধি আপনাদের?”
কাকরাইলের ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির রমনা শাখার উদ্যোগে দলের সদস্য নবায়ন ও প্রাথমিক সদস্য সংগ্রহ অভিযান উপলক্ষে এই অনুষ্ঠান হয়।
মির্জা আব্বাস বলেন, “আজকে পত্রিকা খুলে দেখলাম, এনসিপির (জাতীয় নাগরিক পার্টি) একটা মেয়ে উমামা সে পদত্যাগ করেছেন। কেন? সে বলেছে, এনসিপি মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করছে।
“আরেক রাজনৈতিক দল (ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ) বলছে, বিএনপি-জামায়াতের ওপরে যখন স্টিমরোলার চালানো হচ্ছে, ওই দলটি এবং তার নেতা দূরে থেকে বাহবা দিয়েছে, ইনডাইরেক্টলি হাসিনাকে সমর্থন দিয়েছেন। কালো নির্বাচন, রাত্রে নির্বাচন, ডামি নির্বাচন… তিন বার নির্বাচন হয়েছে উনারা প্রতিবাদ করেন নাই।
“এখন লম্বা কথা বলতেছেন, আগে দিতে হবে স্থানীয় সরকার নির্বাচন, পিআর (আনুপাতিক হারে) সিস্টেমে যদি নির্বাচন না হয় তাহলে এদেশে কোনো নির্বাচন হতে দেওয়া হবে না। একেকজন একেকটা দাবি তুলে নির্বাচনকে পিছিয়ে এবং নির্বাচন অবস্থার সর্বনাশ করে দিয়ে এই দেশের, এই জাতির সর্বনাশ করতে চাচ্ছেন।”
এই বিএনপি নেতা বলেন, চীনে গিয়ে তিনি সেখানে মানুষের মধ্যে ঐক্য দেখেছেন, যা তিনি ঢাকায় দেখতে পান না।
“ইরানে কী দেখলেন বলেন তো? যেখানে আমাদের মুসলিম বিশ্বের কেউ তাকে সমর্থন দিল না, সেখানে ইরান এক যুদ্ধ করে গেল। কারণ ইরানের জনগণ, ইরান জাতি ঐক্যবদ্ধ ছিল।
“আর আমাদের দেশে কিছু রাজনীতিবিদ শুধুমাত্র ক্ষমতায় যাওয়ার লোভে, আরেকদল আছে ক্ষমতায় যেতে দেবো না… এই করে দেশটাকে ৫০ বছরে এগোতে দিলাম না। এই দেশটাকে আমরা ধীরে ধীরে শেষ করে দিচ্ছি “
মির্জা আব্বাস বলেন, “যেসমস্ত লোকদের উদ্দেশ্য করে বলছি তারা কিন্তু বোকা না। তারা আমার চেয়ে অনেক বুদ্ধিমান। তবে এটুকু বলব, তারা আমাদের চেয়ে অনেক বেশি দেশপ্রেমিক নয়।”
‘কারা কু-পরামর্শ দিচ্ছে?’
মির্জা আব্বাস বলেন, “কু-পরামর্শ নিয়ে এই দেশ ও জাতিকে ধবংস করার জন্য এক লোক আজকে মাঠে নেমেছে। তারা জাতিকে আগে বাড়তে দেবে না।
“বারডেম হাসপাতালে প্রতিষ্ঠাতা ডা. মোহাম্মদ ইব্রাহীম সাহেব আমাকে বলেছিলেন, বুঝলে বাবা, ৪৭ বছরে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে ভারত কিন্তু অনেক এগিয়ে গেছে। আর এই ৪৭ বছরে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে আমরা অনেক পিছিয়ে গেলাম। তার এই কথার তাৎপর্য ব্যাখ্যা করলে অনেক বড়।”
অন্য রাজনৈতিক দলগুলোর উদ্দেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই নেতা বলেন, “ আমি সকল পর্যায়ের নেতাদের কাছে, যারা দেশকে ভালোবাসেন, তাদের বলছি, একটা জায়গায় আসেন। যে জায়গায় গেলে পরে দেশটার উন্নতি হবে, দেশের মানুষের উন্নতি হবে।
“এভাবে বড় বড় সমাবেশ করে মানুষের কাছে ভুল বার্তা পৌঁছাবেন না।সমাবেশে দিয়ে যদি প্রমাণ করা যায় কে কত জনপ্রিয়, তাহলে আমরা সারা বাংলাদেশকে এক দিনের সমাবেশের আওতায় আনতে পারি… সারা বাংলাদেশ একদিনে সমাবেশ করবে, কেউ কোনো জায়গা ছাড়বে না। কিন্তু এটা তো সিস্টেম হল না।”
‘আউল-ফাউল কথা বন্ধ করুন’
মির্জা আব্বাস বলেন, “আমি সবাইকে অনুরোধ জানাব, একেকজন এই সমস্ত আউল-ফাউল কথাবার্তা বইলেন না কেউ। মনে করবেন না, সুফিবাদের লোক হলেই সুফি হয়ে যাবেন। আপনারা এই সমস্ত কথাবার্তা বলে দেশবাসীকে বিভ্রান্ত করবেন না।
“পিআর সিষ্টেম না হলে নির্বাচন হতে দেওয়া হবে না, স্থানীয় সরকার আগে না হলে নির্বাচন হতে দেওয়া হবে না, বিচার না হলে নির্বাচন হতে দেওয়া হবে না! আরে ভাই, ‘না’ বলা হয়েছে নাকি। আর আমরা বিএনপি যদি বলি হবে, হবে এবং হবেই। হতেই হবে।”
তিনি বলেন, “কোনো রকমের কনফনট্রেশনে বিএনপি যেতে চায় না। আমরা ১৭ বছর রাজপথে যুদ্ধ করেছি, আমরা আর রাজপথে যুদ্ধ করতে চাই না। আমরা আমার ভাইয়ের সঙ্গে যুদ্ধ করতে চাই না, আমরা বোনদের সঙ্গে, দেশের মানুষের সঙ্গে যুদ্ধ করতে চাই না।”
“আমরা চাই, এদেশের শত্রু যারা আছে, তাদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হয়ে এই দেশটাকে সুন্দর এবং স্বাবলম্বিভাবে গড়ে তুলব। আসুন আমরা ওই জায়গায় যাই যেখানে গেলে এই দেশের মঙ্গল হবে, আমরা ওই কাজটা করি যে কাজটা করলে এই দেশের মানুষের মঙ্গল হবে। আপনি আমি শান্তিমত ঘুমাতে পারব।”
‘চীন প্রসঙ্গে’
মির্জা আব্বাস বলেন, “গত পরশু দিন রাতে ৫দিনের চীন সফর শেষে দেশে ফিরেছি। আমার কাছে ৫দিন তো না ৫ বছর মনে হয়েছে। দেশ ছেড়ে ৫দিন বাইরে থাকা মানে আমার কাছে অনেক সময় মনে হয়। আজকে পত্রিকাটা পড়ে মনটা খুবই খারাপ হয়ে গেল। নিজের দল তো আফটারঅল।আমার মা যদি ছিন্ন ড্রেসে থাকেন, খারাপ অবস্থায় থাকেন, তারপরেও আমার মা। তাকে তো ফেলে দিতে পারব না।
“বিদেশ যত ভালোই হোক, যত সুন্দর হোক, আমি বলতে পারি এই চায়না এই কয়েক বছরে এত উন্নত হয়েছে ভাই, এটা বলার অপেক্ষা রাখে না। আমি সেখানে একটা জায়গায় গিয়ে একজনকে জিজ্ঞাসা করছিলাম, তোমাদের এখানে মারামারি–ধারাধরি হয় না? বলল, মারামারি তো কিছু একটা হয়। তারপরে কী হয়? থানা পুলিশ? ওরা পুলিশ চিনেই না। বলল, পিসম্যান আছে। একেকটা এলাকায়, একেকটা ওয়ার্ডে একেকজন পিসম্যান। অর্থাৎ উনি শান্তি রক্ষা করেন…বুঝতে পারছেন অবস্থাটা। আর আমাদের এখানে অবস্থাটা কী?”
“আওয়ামী দোসর-খারাপ লোকদের সদস্য করা যাবে না’
মির্জা আব্বাস বলেন, “আজকে এই অঞ্চলে সদস্য সংগ্রহ অভিযান। এখানে খেয়াল রাখবেন যে, কাদেরকে আপনারা সদস্য করছেন। প্রয়োজন পড়লে সদস্য হবে না কেউ। কিন্তু খারাপ লোক লোক সদস্য করা যাবে না, আওয়ামী দোসরকে সদস্য করা যাবে না, চাঁদাবাজদের সদস্য করা যাবে না।”
“একটা কথা মনে রাখতে হবে, দুষ্ট গরুর চেয়ে শূন্য গোয়াল অনেক ভাল। আমার গোয়াল খালি থাক, কিন্তু কোনো দুষ্ট গরু জায়গা দেওয়া যাবে না, চাঁদাবাজ জায়গা দেওয়া যাবে না।”
তিনি বলেন, “ আমার কোনো ভাই-ব্রাদার-আত্মীয় স্বজন চাঁদাবাজি করতে যায় না। আমার নাম যারা বলবে, সে যেই হোক, তাকে আপনারা ছেড়ে কথা বলবেন না। তাকে ধরবেন, উত্তম-মধ্যম দেবেন, তারপরে পুলিশে দেবেন। মির্জা আব্বাসের কোনো সহকর্মী, মির্জা আব্বাসের কোনো বন্ধু, মির্জা আব্বাসের কোনো রাজনৈতিক সহকর্মী চাঁদাবাজ হতে পারে না।”
ধান্দাবাজদের কারণে বিএনপির সুনাম যাতে নষ্ট না হয়, সেদিকে সবাইকে খেয়াল রাখতে বলেন দলের এই জ্যেষ্ঠ নেতা।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মকবুল হোসেন সরদারের সভাপতিত্বে ও সদস্য শরীফ হোসেনের সঞ্চালনায় এ অনুষ্ঠানে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব আবদুস সালাম আজাদ ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের তানভীর আহমেদ রবিন, রমনার থানার আইয়ুব উল ইসলাম আইয়ুব, তোফাজ্জল হোসেনসহ রমনা থানা বিএনপির নেতারা বক্তব্য দেন।
আপনার মতামত লিখুন